সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১১ অপরাহ্ন
শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার দুটি স্কুল মাঠে গরুর হাটের জন্য ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে প্রসাশন। বিদ্যালয় মাঠে গরুর হাট বসানোর পরিকল্পনা করায় বিদ্যালয় দুইটির শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। পড়াশুনার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে বিদ্যালয়ের মাঠে গরুর হাট না বসানোর জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয়রা।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানায় , ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের সখিপুর ইসলামীয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের আব্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবার ও গরু ছাগলের হাট বসানোর জন্য ইজারা দেয়ার জন্য ১৯ ফেব্রুয়ারী দিন ধার্য করেছে ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন।
গত অর্থবছরে সখিপুর ইউনিয়নের সখিপুর ইসলামীয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের গরুর হাটের সরকারি ভাবে ইজারা মূল্য ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ইজাদাররা এ গরুর হাট ইজারা নিয়েছে প্রায় ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকায়। এ সব স্কুল মাঠে প্রতি বুধবার গরুর হাট বসে। উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের আব্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের গরুর হাটের সরকারি মূল্য ৩২লাখ নির্ধারন করা হলেও হাটেরর ইজারা দেয়া হয় প্রায় ৬৫ লাখ টাকায়। প্রতি মঙ্গলবার এ মাঠে গরুর হাট বসে।
বিদ্যালয় দুটির মাঠের পাশে সামান্য কিছু খাস জমিতে গরুর হাট বসানোর নাম করে পুরো মাঠ জুড়ে হাট বসানো এখন স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে। বিদ্যালয় দুটির পাশে রয়েছে দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তারাও খেলাধুলার ক্ষেত্রে যৌথভাবে একই মাঠ ব্যবহার করে আসছে। স্কুল মাঠে গরু ছাগলের হাট বসাতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিদ্যালয় গুলোর প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থীকে। প্রতি হাটের দিন এ চারটি বিদ্যালয়ে মর্নিং স্কুল চালু রাখলেও গো-হাটের ধুলাবালি, গরু ছাগলের মলমূত্র, ক্রেতা-বিক্রেতাদের হইচই এর কারণে শিশুরা শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে মারাত্মকভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের বারান্দায় গবাদিপশু বেঁধে রাখা ও ক্রেতা বিক্রেতাদের ধূমপানও হাটের স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঠে গরু ছাগল সহ গবাদি পশুর বিচরনের ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই কাঁদা আর গ্রীষ্মে ধূলা সৃষ্টি হওয়ায় খেলাধূলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এ সকল বিদ্যালয়ের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, গরুর হাটের কারনে তারা ঠিকমত খেলাধুলা করতে পারে না। অসহনীয় ধূলাবালিতে তারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। তাছাড়া গরুর হাটের পরের দিন গবাদি পশুর বর্জ্য থেকে অসহনীয় র্দুগন্ধ ছড়ায়। গাড়ির বিকট আওয়াজ ক্রেতা বিক্রতাদের কথাবার্তা ও চিৎকারে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়।
আব্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাউসার আহমেদ বলেন, গরুর হাটের কারণে প্রতি মঙ্গলবার আমাদের মর্নিং স্কুল বাদ দিতে হচ্ছে। গোবরের গন্ধে হাটের পরের দিন ক্লাস নিতে সমস্যা হয়। বিশেষ করে এ হাটের কারণে শিক্ষার্থীরা খেলাধূলা বঞ্চিত হওয়া সহ স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়ছে।
সখিপুর ইসলামীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহীন মিয়া বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের মাঠের একটি অংশ সরকারি খাস খতিয়ানের অর্ন্তভুক্ত রয়েছে। মূলত সেখানেই গরুর হাট বসার কথা। কিন্তু বাউন্ডারি না থাকায় মাঠের পুরো অংশই হাট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে গরু ছাগলের হাট হিসেবে। এতে করে আমাদের খুবই সমস্যা হচ্ছে।
সখিপুর ইসলামীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য শাহান সরদার বলেন, আমাদের স্কুল মাঠে গরুর হাট বসানোর কারণে বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হওয়া সহ ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান কার্যক্রমে সমস্যা হচ্ছে। বাউন্ডারি থাকলে এ সমস্যা হতো না।
সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মানিক সরদার বলেন, একদিকে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পাচ্ছে অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এট সমাধান হওয়া দরকার।
এ বিষয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলার (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, আমি কিছু বলবো না। বিষয়টি ইউএনও স্যার দেখবেন। তিনি এখন ভারতে আছেন।
শরীয়তপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হেলিম ফকির বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। স্কুল মাঠে কিভাবে গরু ছাগলের হাট ইজারা দেয়া হলো তা না জেনে বলতে পারবো না।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি এ ধরনের কিছু হয়ে থাকে জেনে আইনানৃুগ ব্যবস্থা নেব।
কালের খবর/১৯/২/১৮